June 21, 2025
Health

ধীরে হাঁটা: জীবনের গতি কমিয়ে সুস্থতার পথে এক ইতিবাচক যাত্রা

বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে আমরা যেন প্রতিনিয়তই এক দৌড়ের মধ্যে আটকে পড়েছি। অফিসের সময়, ক্লাসের সময়, যানজটের তাড়া—সব মিলিয়ে জীবন যেন একটি তীব্র গতির ট্রেন। এই দৌড়ঝাঁপের মাঝে আমরা ভুলে যাই আমাদের শরীর-মন মাঝেমধ্যে একটু ধীর গতি চায়। এই ধীর গতি মানে অলসতা নয়, বরং সচেতনভাবে ধীরে হাঁটা, যা এক ধরনের শারীরিক ও মানসিক থেরাপি হিসেবেও কাজ করে।

ধীরে হাঁটার সময় আমরা শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রতি মনোযোগ দিতে পারি, পরিবেশের শব্দ শুনতে পারি, আর মনের ভেতরের চিন্তাগুলোর সঙ্গে একটু সময় কাটাতে পারি। এই অভ্যাস একধরনের সচেতনতা চর্চা, যা মানসিক উদ্বেগ ও হতাশা কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। দিনে মাত্র ২০-৩০ মিনিট ধীরে হাঁটা মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও এন্ডোরফিনের মতো হ্যাপি হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে, যা আমাদের মনকে করে চনমনে ও ইতিবাচক।

অনেকেই মনে করেন ধীরে হাঁটা খুব বেশি উপকার করে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বিশেষ করে বয়স্ক বা দুর্বল হৃদযন্ত্রের রোগীদের জন্য ধীরে হাঁটা একদম আদর্শ ব্যায়াম। এটি হার্ট-রেট স্বাভাবিক রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। দিনে নিয়মিত ৩০ মিনিট ধীরে হাঁটা হৃদরোগের ঝুঁকি ২০–৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে।

ধীরে হাঁটার সময় পায়ে চাপ পড়ে এবং হাড় ও জয়েন্টগুলোর কার্যকারিতা উন্নত হয়। বিশেষ করে হাঁটু ও গোড়ালির জয়েন্টের উপর অতিরিক্ত চাপ না দিয়েই ব্যায়াম করার সুযোগ দেয় এই ধীর গতি। এটি অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায় এবং বয়স্কদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।

যারা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের জন্য ধীরে হাঁটার অভ্যাস অত্যন্ত কার্যকর। খাবারের পর ১৫–২০ মিনিট ধীরে হাঁটা শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং গ্লুকোজের ব্যবহার বাড়িয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

খাবারের পর ধীরে হাঁটা হজমের জন্য উপকারী। এটি পাকস্থলীতে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয় এবং অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা কমায়। যদিও ধীরে হাঁটা হঠাৎ করে ওজন কমাবে না, তবে নিয়মিতভাবে করলে বিপাকীয় হার বাড়ে, যা ধীরে ধীরে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

বিশ্বের অনেক মহান মনীষী—যেমন সক্রেটিস, নিউটন, বেটোফেন কিংবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর—চলার সময় চিন্তা করতে ভালোবাসতেন। ধীরে হাঁটার সময় আমাদের মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়, যা নতুন আইডিয়া বা সৃজনশীল চিন্তার উন্মেষ ঘটায়। তাই একে অনেকেই ‘চলমান মেডিটেশন’ বলেন।

এই অভ্যাস গড়তে দিনে অন্তত ২০–৩০ মিনিট সময় নির্দিষ্ট করুন। হাঁটার সময় মোবাইল ফোন এড়িয়ে চলুন, পার্ক, নদীর পাড়, গাছপালা ঘেরা রাস্তায় হাঁটার চেষ্টা করুন। হাঁটার সময় নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস ও পায়ের ছন্দের দিকে মনোযোগ দিন। বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একসাথে হাঁটলে এটি আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে।

আমাদের শরীর ও মন—উভয়কেই যত্ন দরকার। আর এই যত্নের একটি সহজ কিন্তু শক্তিশালী উপায় হতে পারে ধীর গতিতে হাঁটা। এটি কেবল শরীরচর্চা নয়, বরং এক ধরনের আত্ম-অনুশীলন, যার মাধ্যমে আমরা আবারও নিজেকে খুঁজে পাই। ধীরে হাঁটা মানেই পিছিয়ে পড়া নয়, বরং নিজেকে আরও ভালোভাবে জানার এক অনন্য উপায়। তাই আজই শুরু হোক এই ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ—ধীরে হাঁটা।

Bio Daily Health Desk

Source:

Mayo Clinic – Walking: Trim your waistline, improve your health
https://www.mayoclinic.org/healthy-lifestyle/fitness/in-depth/walking/art-20046261

Harvard Health Publishing (Harvard Medical School) – Walking for health
https://www.health.harvard.edu/staying-healthy/walking-for-health

Leave feedback about this

  • Quality
  • Price
  • Service

PROS

+
Add Field

CONS

+
Add Field
Choose Image
Choose Video