নিকোল অ্যাভেনা (নিউরোসায়েন্টিস্ট এবং পুষ্টি বিশেষজ্ঞ)
কল্পনা করুন – গরম, নরম কুকি, মচমচে ক্যান্ডি, মসৃণ কেক, আর আইসক্রিমে ভর্তি ওয়াফল কন।
মুখে পানি চলে আসছে? মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করছে? কেন হয় এমন?
আমাদের মস্তিষ্কে এমন কিছু ঘটে, যার কারণে চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার অপ্রতিরোধ্য মনে হয়।
চিনি কী?
চিনি হলো একধরনের কার্বোহাইড্রেট, যা নানা খাবার ও পানীয়তে পাওয়া যায়। লেবেলে খেয়াল করলে দেখা যাবে: গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ, মালটোজ, ল্যাকটোজ, ডেক্সট্রোজ, স্টার্চ – এরা সবই চিনির ভিন্ন রূপ।
এছাড়াও হাই-ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ, ফলের রস, কাঁচা চিনি, মধু – সবই চিনিরই একটি রূপ। শুধু মিষ্টান্ন নয়, টমেটোর সস, দই, শুকনো ফল, ফ্লেভারড ওয়াটার – এসবেও চিনি থাকে।
মস্তিষ্কে চিনির প্রভাব
যখন আপনি কোনো মিষ্টি খাবার খান, তখন জিভের স্বাদগ্রাহী রিসেপ্টর চিনিকে শনাক্ত করে। এই তথ্য মস্তিষ্কে পৌঁছায়, বিশেষ করে সেরিব্রাল কর্টেক্সে – যেখানে বিভিন্ন স্বাদের জন্য আলাদা অংশ কাজ করে: তেতো, লবণাক্ত, আর মিষ্টি।
এরপর মস্তিষ্কের ‘রিওয়ার্ড সিস্টেম’ সক্রিয় হয় – এটি এমন এক জটিল স্নায়বিক ব্যবস্থা, যা আমাদের বলে দেয়: “আবার এটা করা উচিত কি না?”
যখন আপনি দাদির বানানো চকলেট কেক খেয়ে ভালো লাগা অনুভব করেন, তখন এই রিওয়ার্ড সিস্টেম কাজ করে। শুধু খাবারই নয় – সামাজিকতা, যৌন আচরণ, এমনকি মাদকও এই সিস্টেম সক্রিয় করে।
কিন্তু সমস্যা শুরু হয় যখন এটা অতিরিক্ত সক্রিয় হয় – তখন নিয়ন্ত্রণ হারানো, অতিরিক্ত চাওয়া এবং সহনশীলতা বাড়ে।
চিনির প্রভাব শুধু মুখেই নয়। খাবার পেটে গিয়ে হজম হওয়ার সময় অন্ত্রে থাকা বিশেষ রিসেপ্টর মস্তিষ্ককে বার্তা পাঠায় – কখন পেট ভরেছে বা কখন ইনসুলিন দরকার।
রিওয়ার্ড সিস্টেম ও ডোপামিন :
রিওয়ার্ড সিস্টেমে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক হলো ডোপামিন। এর নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ঘনসংখ্যক রিসেপ্টর থাকে। মাদক যেমন হেরোইন বা অ্যালকোহল ডোপামিন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয় – তাই সেগুলোর প্রতি আসক্তি হয়।
চিনিও ডোপামিন বাড়ায় – যদিও মাদকের মতো তীব্র নয়। তবে ব্রোকলির মতো স্বাস্থ্যকর খাবার ডোপামিন বাড়ায় না, এজন্য বাচ্চারা সবজি খেতে চায় না।
একই খাবার বারবার খেলে ডোপামিনের প্রতিক্রিয়া কমে যায়।
মস্তিষ্ক নতুন স্বাদের প্রতি বেশি সাড়া দেয় – কারণ এতে নষ্ট খাবার শনাক্ত করা যায় এবং নানা ধরনের পুষ্টি গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
কিন্তু চিনি-মূলক খাবার বারবার খেলেও ডোপামিনের প্রতিক্রিয়া কমে না। তাই এটি মাদকজাতীয় আচরণ তৈরি করে – আর আমরা মিষ্টি খেতে অভ্যস্ত বা আসক্ত হয়ে যাই।
শেষ কথা
চিনি নানা রূপে আমাদের খাদ্যে আছে এবং প্রতিবার এটি খেলে মস্তিষ্কে এক আনন্দময় অনুভূতি তৈরি হয়।
তবে বেশি বেশি খাওয়া হলে, তা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকে পরিবর্তন করতে পারে – যার ফলে আসক্তির মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়।
তাই মাঝে মাঝে এক টুকরো কেক খাওয়া ক্ষতিকর নয়, কিন্তু অতিরিক্ত চিনি খাওয়া অবশ্যই সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
Leave feedback about this